শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
আধুনিক যুদ্ধের নৃশংসতা ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (International Humanitarian Law – IHL) একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ও আইনি কাঠামো প্রদান করে। এটি সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বর্তমান সময়ের পাক-ভারত যুদ্ধ (যদি এমন একটি সংঘর্ষ চলমান থাকে) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই প্রবন্ধে আমরা এই যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নীতিমালা কতটুকু মানা হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করব
যুদ্ধের প্রকৃতি ও IHL-এর প্রাসঙ্গিকতা:
পাক-ভারত দ্বন্দ্ব একটি দীর্ঘকালীন ভূ-রাজনৈতিক সংকটের ফল। যদিও এই ধরনের সংঘর্ষ দুইটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে, তথাপি IHL বিশেষ করে জেনেভা কনভেনশন ও ১৯৭৭ সালের প্রোটোকল I অনুযায়ী, এমন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাতে প্রযোজ্য। IHL যুদ্ধের শুরু হওয়া বৈধ কি না তা বিবেচনা করে না, বরং যুদ্ধ চলাকালে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।
১. বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা:
IHL-এর অন্যতম প্রধান নীতি হলো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা। যদি যুদ্ধক্ষেত্রে বসতবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল বা ধর্মীয় স্থানকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়, তবে তা স্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কোনো পক্ষ যদি সরাসরি বা নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় হামলা করে থাকে, তবে তা IHL লঙ্ঘন।
২. সামরিক লক্ষ্যবস্তুর প্রতি সীমিত আঘাত:
আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রকৃত সামরিক লক্ষ্যবস্তুকেই আঘাত করার অনুমতি রয়েছে। কোনো পক্ষ যদি কৌশলগত সুবিধার জন্য অসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে, তাহলে তা অসংগত ও অবৈধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।
৩. আনুপাতিকতা ও সতর্কতা:
IHL অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া বা আক্রমণ অবশ্যই আনুপাতিক হতে হবে। একটি ছোট হামলার জবাবে ব্যাপক ধ্বংস সাধন বা সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করা আইনসিদ্ধ নয়। একইসঙ্গে, প্রতিটি হামলার আগে সতর্কতা প্রদান করার বিধান রয়েছে।
৪. যুদ্ধবন্দীদের অধিকার:
যুদ্ধবন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, যেমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, বা বিচারবহির্ভূত হত্যা, জেনেভা কনভেনশনের সরাসরি লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়গুলোর উপর নজরদারি রাখে।
৫. আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জবাবদিহিতা:
যুদ্ধকালীন অপরাধের অভিযোগ উঠলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) বা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করা সম্ভব। এমনকি দেশীয় আইনের আওতাতেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন হলো একটি মানবিক চুক্তি, যা যুদ্ধের মধ্যে ন্যূনতম মানবতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। চলমান পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যদি উভয় পক্ষ এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে থাকে, তবে তা শুধু আন্তর্জাতিক আইন নয়, মানবতারও পরিপন্থী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার উচিত এসব কার্যকলাপের সঠিক অনুসন্ধান ও দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।
পরিশেষে, এই সংঘাত যেন কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছে এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধের পরিবর্তে মানবিক ও আইনসঙ্গত উপায়ে সমস্যার সমাধান ঘটে—এটাই আমাদের কাম্য।
রমজান আলী
অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট,কুমিল্লা